রোজ রোজ একই কথা। হাবাগোবা ! হাবাগোবা !  এছাড়া আর কোন উক্তি নেই । হাবাগোবা কথাটি শুনতে শুনতে ঘেন্ন্যা ধরে গেছে জসিমের। স্কুলের বন্ধুরা দুর থেকে দেখেই বলে উঠে ‘‘ ঐ আসছে ‘‘ হাবাগোবা”।  সবাই হিঃ হিঃ করে হেসে উঠে। ক্লাসের অংক শিক্ষক আব্দুর সুবুর স্যার। ক্লাসে  অংক করাতে যেয়ে মাঝে মাঝে ভুলে যায়। তখন এক দৌড়ে লাইব্রেরীতে যেয়ে অংক মুখস্ত করে আসে। সে ও  আমাকে বলে ‘‘রামছাগল বলি একটা উত্তর দেয় আরেকটা’’।  ক্লাসের সবচেয়ে সুন্দর মেয়েটি, রূপা। তাকে দেখলে আমি বলি ‘‘তুমি ধবধবে সাদা কাপড়ের মতো সুন্দর।   সে ও ইদানিং দেখলেই টিম্পুনি কেটে বলে ‘‘গাধা ”। বাসায় ফিরলে দাদু বলে ‘‘ আমার ছেলে একটা বাঘ, আর বাঘের ঘরে হয়েছে একটা ‘বিলাই’। আমার বাবা, সন্ত্রাসীদের নাম শুনলে খাটের নিচে লুকিয়ে থাকে। সে কি করে বাঘ হয়। প্রাণী বিজ্ঞানী ‘চালস্ ডারউইন’ বেঁচে থাকলে জিজ্ঞাসা করতাম বাঘের ঘরে কি করে বিলাই হয়। ছোট কাক্কু তো মহাপন্ডিত। পদার্থ বিজ্ঞানে পড়াশুনা করে বিজ্ঞানী আলবার্ট আইনস্টাইন হতে চেয়েছিলো। কিন্তু হয়েছে একটা অপদার্থ। ১৯৩৫ সালে প্রিন্সটন ইউনিভার্সিটিতে আইনস্টাইনকে প্রশ্ন করেছিলো, ‘পড়াশুনা ও গবেষণার জন্য আপনার কী কী দরকার?’ আইনস্টাইন বললেন, ‘একটা ডেস্ক, কিছু কাগজ আর একটা পেনসিল। সঙ্গে দরকার বড় একটা ডাস্টবিন, যেখানে আমার সব ভুল করা বা ভুলে ভরা কাগজগুলো ফেলব!’ ছোট কাক্কুর আইনস্টাইন এর মতো কি সব আবোল তাবল লিখে এক বান্ডেল কাগজ নষ্ট করেছে। তখন কাক্কুকে সহজ পরামর্শ দিয়ে বলেছি, ‘অন্য বিজ্ঞানীদের ফলো করতে।’  কি আর বলবো বিজ্ঞানী স্যার আইজ্যাক নিউটনের বলবিজ্ঞান মহাকর্ষক এর তৃতীয় সূত্র পরীক্ষা করতে যেয়ে ১০ বার নৌকা থেকে লাফ দিয়ে পানিতে হাবুডুবু খেয়েছে। শেষ পর্যন্ত  সেও বলে উঠে আমি আস্ত একটা  ‘‘গরু’’। ছোট কাক্কুকে একদিন বলেছিলাম তৃতীয় সূত্রের কথা, কাক্কু ‘‘প্রত্যেক ক্রিয়ারই একটি সমান বিপরীত প্রতিক্রিয়া আছে, তুমি নৌকা থেকে তীরে লাফ দেওয়ার দরকার নেই। তুমি পানিতে পরে যাবে। সে বিশ^াস করে নাই। আমার উপর রাগ করে এগুলো করেছে। যতবার নৌকা থেকে পানিতে লাফ দিয়েছে ততবার পানিতে পরে চুবনি খেয়েছে। সামনের একটি দাঁতও ভেঙেছে। এখন কিছু হলেই আমাকে ধমক দিয়ে দিয়ে বলে ব্যেটা গরু কোথাকার। তোর জন্য আমার একটা দাঁত গেলো। মনে মনে বলি হায়রে কপাল, গরু আমি না সে। তাও আবার ব্যেটা গরু । গরু তো ব্যেটাই হয় । বেটা গরু কখনো গাভী হয়।     
আমি এত করে বলি আমার নাম হাবাগোবা, গাধা, রামছাগল, গরু, বাছুর, বিলাই,  এগুলো কোনোটাই না । আমি আশরাফুল মাখলুকাত অর্থ্যা সৃষ্টির সেরা জীব। আমার নাম  জসিম। তাছাড়া এগুলো নিরীহ প্রাণী সামজের অনেক কাজে আসে। আমি শুধু খাই-দাই  ঘুমাই আর স্কুলে যাই। সমাজের কোন কাজে আসি না। তবুও তারা বুঝে না । এগুলো থেকে পরিত্রান পাবার জন্য পাশের গ্রামের হাবলু চাচার কাছে গেলাম। শুনেছি তার অনেক ধৈয্য ৭ বার মেট্টিক পরীক্ষা দিয়ে ৮ম বারের সময় পাস করেছিলো। সে খুশিতে গরুর গাড়ীতে করে মাথায় সাতপাকওয়ালা পাগড়ি পরে, গলায় দুই কেজি ওজনের মালা পরে।  সাথে ঢোল বাজনা তে আছেই । পুরো গ্রাম ঘুরেছে। সে নিশ্চয় অনেক ধৈায্যশীল পরিশ্রমী । তার কাছে কিছু একটা সমাধান পাওয়া যাবে। তার কাছে যেয়ে জসিমের সমাধান মিললো। সে একবাক্যে বলে দিলো ‘‘ গলায় দঁড়ি পেঁচিয়ে কচুগাছের নিচে ঝুলে থাকার জন্য। জসিম মনে মনে ভাবলে হাবলুভাই ভালো মানুষ । নিশ্চয়ই খুব ভালো একটা পরামর্শ দিয়েছে।  জসিম তাই করলো দঁড়ি নিয়ে কচু গাছ খুজঁতে লাগলো। বনে-বাদরে, খালেবিলে, ডোবায় এমনকি রহিম চাচাঁর আমবাগানেও। কোন কিছু না বুঝেই ডুকে পরে। রহিম চাচা তখন আম পাহাড়া দিচ্ছিলো। জসিমকে দেখেই ছুটে আসে। ‘‘ কিরে হাবাগোবা আম চুরি করতে এসেছিস আমার বাগানে ? ওমন পাঁকা পাঁকা আম দেখে লোভ সামলাতে পারিস না। তোর সাহাস তো কম না। জসিম মাথা নেড়ে বলে,‘‘ ছি... ছি.. চাচা কি বলেন। আম চুরি করবো কেন ? আমি তো বড় একটা কচু গাছ খুজঁছি। রহিম চাচা মাথা নেড়ে বলে,‘‘বুজেছি কচুর শাক খাবি,  তে এখানে কোন ডোবার ধারে অনেক কচুগাছ আছে সেখানে  যা।  জসিম মাথাটাক ঢেউয়ের মতো নাড়িয়ে বলে, ‘‘গিয়েছিলামতো  সেখানে কচুগাছগুলো ছোট ছোট সব আমার হাটুর সমান। 
করিম চাচা কথা না বাড়িয়ে বুঝে নিলো ছেলেটি হাবাগোবা তাকে বুদ্ধি দিয়ে কাজ নেই বরং ধমক দিয়ে তাড়িয়ে দেই । করিম চাচা তাই করলো । করিম চাচার ধমক খেয়ে বুঝে নিলো গলায় দঁড়ি দোবার মতো বড় কচুগাছ কোথাও নেই। আপাতত: এর কোন সমাধান নেই। তাকে হাবাগোবাই থাকতে হবে। মনের দু:খে সে পুকুর পারে যেয়ে পানিতে লাফিয়ে পড়ে। একেক করে সাত আটবার পানিতে ডুব দেয়। সে পথ দিয়ে যাচ্ছিলো মসজিদের মুয়াজ্জিন রহমত আলী । জসিমের দাদা ।  সে ও জসিমকে ডুবাতে দেখে ধমক দিয়ে বলে, ‘‘ ঐ যে বলদটা কিভাবে পানিতে ডুব দিচ্ছে।’’  চিৎকার দিয়ে বলে ‘‘এভাবে পানিতে ডুব দিইছ না, ঠান্ডা লেগে যাবে।  তারাতারি মসজিদে নামাজ পরতে আই। দেখবি আল্লাহ-তালা তোকে অনেক জ্ঞান দিবে তুই আর বলদ থাকবি না। 
জসিম বুঝে উঠতে পারছে না কেন তাকে বলদ বলা হলো ‘‘ বলদ কি এভাবে পানিতে ডুব দেয়। ডুবুরী বললে পারত । কারন ডুবুরীরা পানিতে এভাবেই ডুব দেয় ।  বলদ তো পানিতে ডুব দেয়ই  না । দাদার বলদটাকে আজ পর্যন্ত দেখলাম না পানিতে ডুব দিতে। নিজের দিকে তাকিয়ে দেখে বলে ‘‘আমি তো মানুষই আছি, বলদ না। পুকুর ঘাটে বসে বসে ইত্যাদি নানান কথা ভাবছে । যত ভাবছে ততই মন খারাপ হচ্ছে জসিমের। 
পুকুরঘাটে এদিক সেদিন ছলছল করে তাকাচ্ছে। ভাবছে ইস, ‘‘বাংলাদেশের উদ্ভিদ বিজ্ঞানী জগদীশ চন্দ্র বসু বেঁচে থাকলে জিজ্ঞাসা করা যেতে বড় কচু গাছ কোথায় পাওয়া যায়। আপাতত  তাও সম্ভব না।  পুকুরের পানিতে কি সুন্দর ছোট ছোট ঢেউ। টেউ এর উপর গাছ থেকে পাতা পরছে। সে পাতগুলো ছোট ছোট নৌকার মতো ভেঁসে বেড়াচ্ছে। সেই নৌকাগুলো যাত্রী হচ্ছে ছোট ছোট পোকামাকর। জসিম এগুলো দেখছে আর একা একা হাসছে।  হঠাৎ পুকুর ঘাটে পূর্ব পাশে দেখতে পেলো বড় বড় দুটি কুচু গাছ। বড় কচুগাছ দেখে চিংকার করে উঠে জসিম ‘‘ ইউরেকা পেয়েছি ! পেয়েছি কচুগাছ! পেয়েছি কচুগাছ ! বলেই উঠে দাড়াঁয়। তাকে আর হাবাগোবা থাকতে হবে না। কচুগাছের কাছে যেতেই চোখ পরে কচুগাছের নিচে একটা পিতলের বাতি। পিতলের বাতিটি ঠিক অন্য রকম মনে হচ্ছে। জসিম পিতলের বাতিটি হাতে তুলে নিলো। নিজের গায়ের জামা দিয়ে পিতলের বাতিটি ভালোভাবে ঘষে পরিষ্কার করতে থাকে। এই পুকুরটি কয়েক হাজার বছরের পুরাতন অনেক বড়।  এমন সময় পকুরের নিচ থেকে ভেসে আসে মৎস্য কন্যা । রুপকথার গল্পে শুনেছে মৎস্য কন্যার নাম। কিন্তু আজ সে বাস্তবে দেখছে। এত সুন্দর মৎস্য কন্যা। তাই সে ভয় না পেয়ে বলল ,,‘‘ ও মৎস্য কন্যা, তুমি কিভাবে আসলে ?  মৎস্য কন্যা হেসে বলে তোমার হাতে যে পিতলের বাতিটি । সে বাতিটিতেই আমার বসবাস। সেই পিতলের বাতিটিতে আমাকে বন্দি করে রেখেছিলো এক দুষ্টু জিন। তুমি তোমার জামার কাপড় দিয়ে ঘষতেই সেই বাতির মুখ খুলে যায় । আমি মুক্ত হয়ে যাই।  তুমি আমার উপকার করেছো। আমাকে মুক্ত করেছে। তুমি কি চাও ? হীরা, মানিক, জহরত, ধন সম্পদ, রাজপ্রাসাদ বলে আমাকে। 
জসিম খানিকটা মাথা চুলকালে তারপর বললো “ আমি কিছু চাই না, ‘‘ এই মুহুর্তে আমার বড় একটা কচু গাছ লাগবে।  মৎস্য কন্যা হো.. হো .. করে হেসে উঠে, বলে  ‘ এতকিছু থাকতে কচুগাছ কেন ? তাও  আবার বড় কচুগাছ ।  
জসিম বিস্ময় চোখে মৎস্য কন্যার দিকে তাকিয়ে বলে ‘‘আমার জ্ঞান শক্তি কম,‘‘ সবাই আমাকে হাবাগোবা বলে।  হাবলু চাচা বলেছে গলায় দঁড়ি পেঁচিয়ে কচু গাছের নিচে ৮ মিনিট ৩০ সেকেন্ড ঝুলে থাকতে। তাহলে কেহ আমাকে হাবাগোবা, গরু, বছুর, ছগল, বলদ, বিলাই ইত্যাদি বলে ডাকবে না। গরু, ছাগল, বলদ, ওরা নিরিহ প্রাণী মানুষের জন্য কতকিছু করে। আমি শুধু খাই দাই আর ঘুমাই।
মৎস্য কন্যা ও মৎস্য কন্যা, ‘তুমি বলো না, ‘আমার জ্ঞান শক্তি কিভাবে হবে।’’
মৎস্য কন্যা আবারও হাসলো । 
গম্ভীর ভাবে চিন্তা করে বললো,‘‘ জ্ঞান শক্তি হবে। বেশী বেশী করে পড়শুনা কর আর মহান আল্লাহর তালার কাজ কর। ” আমাকে যখন প্রয়োজন হবে তোমার হাতের ঐ পিতলের বাতিটি ঘষবে আমি চলে আসবো। বলেই পানিতে মিলিয়ে যায় মৎস্য কন্যা।  জসিম গভীর ভাবে চিন্তা করে । মৎস্য কন্যা  ঠিক কথা বলেছে ‘পড়শুনা করতে হবে বেশী বেশী করে । কিন্তু আল্লাহর কাজগুলো কি ? তার জন্য আল্লাহর কাছে যেতে হবে। আর আল্লাহর কাছে যেতে হলে মসজিদে যেতে হবে। মসজিদের মুয়াজ্জিন দাদা বলে দিতে পারবে আল্লাহ কোথায় থাকেন। জসিম এক মহুর্ত দেরী না করে মুয়াজ্জিন দাদার উদ্দ্যেশে রওনা হয়। তখন মসজিদের নামাজ শেষে মুয়াজ্জিন দাদা বাহিরে বের হয়ে আসছে। মুয়াজ্জিন দাদার কাছে যেয়ে জোর আবদার নিয়ে চিৎকার করে বলতে থাকে । দাদা ও দাদা । দাদা । ও দাদা বলো না। আল্লাহ কোথায় থাকেন । আল্লাহর কাজ করবো । আল্লাহকে দরকার ।  মুয়াজ্জিন দাদা বিরক্ত হয়ে উঠে। হাবাগোবা সে আবার কি আল্লাহর কাজ করবে । যা এখান থেকে। বাদর কোত্থাকার।  জসিম  বলে উঠে, বাদর এটা আবার কি। বানরের নাম শুনেছি । নতুন করে আমার আরেকটি নাম যুক্ত হলো ‘বাদর’ । জসিম জেদ ধরে বলে উঠে ‘‘না যাব না’’ । আল্লাহ্ কে পাবো কোথায় ? আল্লাহকে কোথায় পাবো আমাকে উনার ঠিকানা বলো দাও,  দাদা ?  না বললে তোমাকে ছারবো না ।  
মুয়াজ্জিন দাদা খুবই বিরক্ত হলো । তাকে সোজা পশ্চিম দিক দেখিয়ে বলে। আল্লাহকে পেতে হলে সোজা পশ্চিম দিকে  যা।  জসিম তাই বিশ^াস করলো। গ্রামের মেম্বার মাতাব্বর এর মিথ্যা কথা কয় কিন্তু মুয়াজ্জিন দাদা কখনও মিথ্যা বলে নাই ।  জসিম এই বিশ^াসটা মনেপ্রাণ গেঁথে নিলো।  হাতের পিতলের বাতিটি মুয়াজ্জিন দাদার হাতে দিয়ে বলে এটা রাখে । আমাদের পুকুর পারে নিরবে এই বাতিটি ঘষা দিলো । এক মৎস্য কন্যা উঠে আসবে সেখানে তুমি ধন সম্পদ যা চাইবে তাই পাবে। এই বলে মুয়াজ্জিন দাদার কাছে পিতলের বাতি আমানত রেখে চলে যায়।  
জসিম সোজা পশ্চিম দিকে হাটতে থাকে। হাটতে হাটতে গ্রাম পেরিয়ে আরেক গ্রামে চলে আসে। সেখানে খুব পানির তৃষ্ণা পায়।  এক বুড়িমার কাছে পানি চায়। বুড়িমা পানি নিয়ে আসে। ডকডক করে পানি পান করে রওনা হওয়ার সময় বুড়িমা কে বলে ‘‘ বুড়িমা আমার জন্য দোয়া কর আল্লাহর সাথে দেখা করতে যাচ্ছি। তার কথা শুনে বুড়িমার মনে বিশ^াস জন্মায় । সে ভেবেছে নিশ্চয়ই আল্লাহ তালার বড় কোন পীর-আওলিয়া-দরবেশ হবে। ছদ্মবেশে পাঠিয়েছে। বুড়িমা তাকে অনুরোধ করে একটু খানি অপেক্ষা করার জন্য। বুড়িমা তার সারাজীবনের সঞ্চিত কিছু অর্থের একটি পুটলা তার হাতে তুলে দিয়ে বলেন,“ এগুলো তোমার কাজে আসবে । আমার এই পৃথিবীতে কেহ নেই তাই এগুলো তোমাকে দিয়ে দিলাম । আমার জন্য আল্লাহর কাছে সুপারিস করবে । জসিম কোন কিছু না বুঝে বিজ্ঞের মতো মাথা নেড়ে বলে ঠিক আছে বুড়ি মা ‘সুপারিশ করবো ।” 
জসিম আবার যাত্রা শুরু করলে । যেতে যেতে বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যে । সন্ধ্যে গড়িয়ে রাত। খুব খিদে পায়। একটি খাবারের দোকানে যেয়ে বলে আমাকে তারাতারি খাবার দাও।  সেখানে পেট পুরে খেয়ে নিলো। খাবারের দেকানে বৃদ্ধলোকটি কাছে বিল দিয়ে তার কাছে দেওয়া চাইলো,‘‘ চাচা আমার জন্য দোয়া করবেন আল্লাহর সাথে দেখা করতে যাচ্ছি।” বৃদ্ধলোকটি জসিমের কথা শুনে উঠে দাড়াঁয় নিশ্চয়ই কোন অলি-আউলিয়া হবে। এ আমি কি করলাম ।  ছি! ছি! না জেনে শুনে তার কাছ থেকে খাবারের বিল নিলাম।, তরিঘরি করে দোকান মালিক বৃদ্ধলোকটি খাবারের বিল ফেরত দিয়ে জসিমের পা জড়িয়ে ধরে বলে আমাকে মাফ করে দিন । আমি পাপি । ভুল করেছি। ?  
জসিম লোকটিকে বুকে জড়িয়ে ধরে, আপনি পাপ করে থাকলে, মাফ করার মালিক একমাত্র আল্লাহ তালা, তিনি মাফ করবেন। তার কাছে আমি যাচ্ছি সে আমাকে জ্ঞানবুদ্ধি দান করবেন। আমি বলে দিবে তিনি যেনে আপনার পাপ মাফ করে দেয়।” বলেই জসিম রওনা হলো পশ্চিম দিকে। তখন বৃদ্ধলোকটি হোটেলে সিন্দুকের ভেতর থেকে একটি বাকাঁ বিভিন্ন ধাতুর মিশ্রনে তৈরী লাঠিটি জসিমের হাতে তুলে দিয়ে বললো “ এটা সাত রাজার ধন। পথে যে কোন  শয়তান অক্রমন থেকে রক্ষা করবে। জসিম লাঠিটি তার হাতে নিলো বিজ্ঞের মতো মাথা নেড়ে সায় দিয়ে বললো ঠিক আছে ! ঠিক আছে ।  
আকাশে চাঁদটি  ঠিক মাঝ আকাশে । গ্রামের আঁকাবাক মেঠোপথ আর খালবিল পুকুরের ধার বেয়ে ক্ষেত খামারের মধ্য দিয়ে পথ চলছে জসিম । যেতে যেতে মধ্য রাত। এক  বিশাল নদীর সামনে যেয়ে উপস্থিত। নদী পার হবে কি করে । নদীর ধারে কোথাও নৌকা, লঞ্চ, ইস্টিমার কিছুই দেখা যাচ্ছে না। তবে একটু দুরে একটি বিশাল আকৃতি লঞ্চ দেখা যাচ্ছে ।  সেই নদীর ধারেই তাবু পেতেছিলো সাত রাজ্যের রাজা বীর শাহেদ আলী।  
জসিম তড়িঘড়ি করে নদীর পাশ দিয়ে হেটে জমিদারের তাবুর দিকে যাচ্ছিলো। পথে দেখতে  পেলে  নদীর ধারে একটি লোক অনেক হিরামানিক চুন্নি জহরত গলায় পরে হাটছে।  পেছনে একটি বড় দানব আকৃতির অজগর সাপ ।  জসিম লোকটিকে ডেকে সাবধান হতে বললো । লোকটি পেছন ফিরে তাকিয়ে দেখে একটি বিশাল দানব আকৃতির অজগর সাপ ।  ভয়ে চিৎকার করার আগেই জসিম লাঠিটি ছুড়ে মারে অজগর সাপের দিকে । মুহুর্তেই অজগর সাপটি উধাও হয়ে যায়। জমিদার রক্ষা পায় সাপটির হাত থেকে । কৃতজ্ঞতা জানানোর জন্য জসিমের কাছে ছুটে আসে ।  জসিম বিজ্ঞের মতো মাথা নেড়ে বলে ‘‘ঠিক আছে, ঠিক আছে , তোমার নাম কি ? জমিদার হতবাক কি ব্যাপার এই ছেলেটি আমাকে চিনি না। আমি সাতরাজ্্েযর মহারাজা  ?  হতভম্ব হয়ে  মহারাজ জসিমকে বলে তোমার নাম বলো ।
জসিম বিজ্ঞের মতো মাথা নাড়ে বলে উঠে জসিম, “ আমি আল্লাহর সাথে দেখা করতে যাচ্ছি ।  কিন্তু নদীটি পার হওয়া দরকার ।” 
জমিদার খানিক অবাক। নিশ্চয়ই আল্লাহ্র কোন বড় পীর আওলীয়া হবে। আমাকে  মস্তবড় বিপদ থেকে রক্ষা করেছে। আমার বিশ^াস তার সাথে আমার মেয়ের বিয়ে দিলে  আমার মেয়ে সুস্থ হবে। সুখী হবে । জমিদার তাৎক্ষনিক ভাবে জসিমের হাত ধরে বলে ওঠে “ তোমাকে নদীর পার হওয়ার ব্যবস্থা করে দিচ্ছি ” কিন্তু শর্ত আছে  ? 
জসিম সহজ একটি হাসি দিয়ে বলে ‘‘ কি শর্ত, আমি যে কোন শর্তে রাজি আছি, আমাকের যে আল্লাহর সাথে দেখা  করতেই হবে। সাত রাজ্যের মহারাজা, খানিকটা ভেবে নিলো, ‘‘ ভেবে চিন্তে বলে ফেলে, তুমি তো আল্লাহর কোন অলী আওলীয়া হবে ।  শোন তুমি আল্লাহর সাথে দেখা করতে যাচ্ছো । আমার মেয়ে খুবই অসুস্থ, তাকে তুমি তোমার সাথে নিয়ে যাও, আল্লাহ দোয়ার বরকতে ইনশাল্লাহ আমার মেয়ে সুস্থ হয়ে যাবে। তোমাকে আমার সাত রাজ্যের ধন সম্পদ সবকিছু তোমার নামে লিখে দিচ্ছি, আর তোমার সাথে ধন সম্পদ পরিপূর্ন সাতটি জাহাজ যাবে । তুমি আমার মেয়েকে নিয়ে যাও ।  
জসিমের খুব মায়া হলো রাজার মেয়ে অসুস্থতার কথা শুনে, ‘তরিঘরি করে বলে ফেলে, ‘‘ তাড়াতাড়ি আমার সাথে আপনার মেয়েকে দিয়ে দেন।  আপনার রাজ্যের-টাজ্জের ধন সম্পদ আমার দরকার নেই ।  শুধু একটা নৌকা দিলেই হবে। তাড়াতাড়ি করেন। 
সাতরাজ্যের রাজা তো হতভাগ ছেলেটির কোন লোভ নেই তার মানে সে নিশ্চয়ই আল্লাহর কোন অলী আওলীয়া । তার সাথেই আমার মেয়ের বিয়ে হবে ।  সে আবারও ভেবে নিয়ে বললো,‘‘ শোন আমার মেয়েকে নিতে একটা শর্ত আছে তাকে তোমার বিয়ে করতে হবে। ”  
জসিমের খুবই ব্যস্ততা । সে প্রথমই বলেছে রাজার সব শর্ত সে মেনে নিবে । তাই তড়িঘরি করে বলে ফেলে  ঠিক আছে তাড়াতাড়ি করে বিয়ের ব্যবস্থা করেন । 
জসিম সম্মতি দেখে রাজা তো মহাখুশি । ধুমধাম করে রাজার মেয়ের সাথে জসিমের বিয়ে হলো ।  এদিকে জসিমের হাতে সাতা রাজার ধন  যে  লাঠিটি স্পর্শ করতেই রাজকন্যা সুস্থ হয়ে উঠে । রাজ্যের নতুন রাজা হিসাবে জসিমকে ঘেষণা করা হলো । জসিম এর জ্ঞান বুদ্ধি সব ফিরে এলো । নতুন রাজকন্যাকে নিয়ে জসিম সাতটি জাহাজে করে রওনা দিলো ।  নদীর পেরিয়ে সমুদ্র । পৃথিবী গোল । তাই  সমুদ্র জাহাজ চলতে চলতে আবার সেই জসিমদের গ্রামে ফিরে এলো । এদিকে গ্রামের মানুষের খুশির সীমা রইলো না ।  গ্রামে ধুমধাম করে নতুন রাজাকে অবর্থনা জানালো ।  আর এভাবেই গল্পটি শেষ হলো । ..  . . . . . . . . . . . . . . . . . . . ।